Saturday 30 September 2017

প্রাচীন বাংলার জনপদ

ইতিহাস বিষয়ক আলোচনায় যুগের বিভাজন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক বৈশিষ্ট্যের উদ্ভব, বিকাশ ও প্রভাবের কার্যকারিতা নিয়েই এ যুগ বিভাজন নির্ণয় করা হয়ে থাকে। সাধারণত ইতিহাসে খ্রিষ্টপূর্ব কয়েক শতক পূর্বের সময় থেকে খ্রিষ্টীয় পঞ্চম শতকেই প্রাচীনকাল বা যুগ বলে ধরা হয়ে থাকে। তবে অঞ্চল ভেদে কালবিভাজনের তারতম্যও লক্ষ্য করা যায়। খ্রিষ্টীয় তেরো শতকের পূর্ব পর্যন্ত দীর্ঘ প্রায় দু’ হাজার বছরের সময়কে বাংলার প্রাচীন যুগ বলে ধরা হয়ে থাকে।
প্রাচীন যুগে বাংলা (বর্তমানের বাংলাদেশ ও পশ্চিম বঙ্গ) এখনকার বাংলাদেশের মতো কোনো একক ও অখণ্ড রাষ্ট্র বা রাজ্য ছিল না। বাংলার বিভিন্ন অংশ তখন অনেকগুলো ছোট ছোট অঞ্চলে বিভক্ত ছিল। আর প্রতিটি অঞ্চলের শাসক যার যার মতো শাসন করতেন। বাংলার এ অঞ্চলগুলোকে তখন সমষ্টিগতভাবে নাম দেয়া হয় ’জনপদ’।
জনপদ
চতুর্থ শতক হতে গুপ্ত যুগ, গুপ্ত পরবর্তী যুগ, পাল, সেন প্রভৃতি আমলের উৎকীর্ণ শিলালিপি ও সাহিত্য গ্রনে' প্রাচীন বাংলার জনপদগুলোর নাম পাওয়া যায়। এসব জনপদ ঠিক কোথায় কতখানি জায়গা জুড়ে ছিল তা বলা যায় না। তবে প্রাচীনকালের প্রাপ্ত বিভিন্ন ঐতিহাসিক উপাদান হতে তাদের অবস্থান সম্বন্ধে মোটামুটি আঁচ পাওয়া যায়। নিচে কয়েকটি জনপদের বর্ণনা দেয়া হলো।
গৌড় :
গৌড় নামটি সুপরিচিত হলেও প্রাচীনকালে গৌড় বলতে ঠিক কোন অঞ্চলকে বোঝাত এ নিয়ে প্রচুর মতভেদ আছে। আর যে এলাকা গৌড় বলে অভিহিত হতো কেনই বা সে অঞ্চল এ নামে অভিহিত হতো আজ পর্যন্ত সেটাও সঠিকভাবে জানা যায় নি। পাণিনির গ্রনে' সর্বপ্রথম গৌড়ের উলে- দেখা যায়। কৌটিল্যের “অর্থশাস্ত্র’ গ্রনে' গৌড়খ দেশের অনেক শিল্প ও কৃষিজাত দ্রব্যের উলে- পাওয়া যায়। ব্যাৎসায়নের গ্রনে'ও তৃতীয় ও চতুর্থ শতকে গৌড়েরখ নাগরিকদের বিলাস-ব্যসনের পরিচয় পাওয়া যায়। হর্ষবর্ধনের শিলালিপি হতে প্রমাণিত হয় যে, সমুদ্র উপকূল হতে গৌড়দেশ খুব বেশি দূরে অবসি'ত ছিল না। ষষ্ঠ শতকে লেখা বরাহ মিহিরের বিবরণ হতে দেখা যায় যে, গৌড় অন্যান্য জনপদ, যথা- পুন্ড্র, বঙ্গ, সমতট থেকে আলাদা একটি জনপদ। “ভবিষ্য পুরাণ’-এ একে পদ্মা নদীর দক্ষিণে এবং বর্ধমানের উত্তরে অবসি'ত অঞ্চল বলে বর্ণনা করা হয়েছে। এ উক্তির সঙ্গে সপ্তম শতকের লোকদের বর্ণনার যথেষ্ট সামঞ্জস্য আছে। সপ্তম শতকে গৌড়রাজ শশাংকের রাজধানী ছিল মুর্শিদাবাদের নিকটবর্তী কর্ণসুবর্ণ। আর শুধু বা শশাংকই কেন, পরবর্তীকালে আরও অনেকের রাজধানী ছিল এই গৌড়।
পাল রাজাদের আমলে গৌড়ের নাম-ডাক ছিল সবচেয়ে বেশি। উত্তর ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চল তখন গৌড়ের অন্তর্ভুক্ত ছিল। সাম্রাজ্যের কেন্দ্রস'ল হওয়ায় তার প্রতাপ ছিল অপ্রতিহত। পরবর্তীকালে পাল সাম্রাজ্যের ভাগ্য পরিবর্তনের সাথে সাথে গৌড়ের ভাগ্যও পরিবর্তিত হয়ে যায়। গৌড়ের সীমা তখন সীমাবদ্ধ হয়ে আসে। আধুনিক মালদহ, মুর্শিদাবাদ, বীরভূম ও বর্ধমানের কিছু অংশ গৌড়ের সীমানা বলে মনে করা হয়। সপ্তম শতকে গৌড়রাজ শশাংকের রাজধানী ছিল মুর্শিদাবাদ জেলার কর্ণসুবর্ণ। মুসলমান যুগের শুরুতে মালদহ জেলার লক্ষণাবতী গৌড় নামে অভিহিত হতো। পরে গৌড় বলতে সমগ্র বাংলাকে বুঝাত।
বঙ্গ :
বঙ্গ একটি অতি প্রাচীন জনপদ। অতি প্রাচীন পুঁথিতে একে মগধ ও কলিঙ্গ জনপদের প্রতিবেশী বলা হয়েছে। মহাভারতের উলে- হতে বুঝা যায় যে, বঙ্গ, পুন্ড্র, তাম্রলিপ্ত ও সুহ্মের সংলগ্ন দেশ। চন্দ্রগুপ্ত, বিক্রমাদিত্য, চালুক্যখ রাজা ও রাষ্ট্রকূটদের শিলালিপি এবং কালিদাসের গ্রনে' এ জনপদের বর্ণনা পাওয়া যায়। বর্তমান বাংলাদেশের পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব দিকে বঙ্গ নামে একটি জনপদ গড়ে উঠেছিল। অনুমান করা হয়, এখানে “বঙ্গ’ নামে এক জাতি বাস করত। তাই জনপদটি পরিচিত হয় “বঙ্গ’ নামে। সাক্ষ্য প্রমাণ থেকে মনে হয়, গঙ্গা ও ভাগিরথীর মাঝখানের অঞ্চলকেই বঙ্গ বলা হতো। পাল ও সেন বংশীয় রাজাদের আমলে বঙ্গের আয়তন সঙ্কুচিত হয়ে পড়ে। একাদশ শতকে পাল বংশের শেষ পর্যায়ে বঙ্গ জনপদ দুভাগে বিভক্ত হয়ে উত্তর বঙ্গ ও দক্ষিণ বঙ্গ নামে পরিচিত হয়। পদ্মা ছিল উত্তরাঞ্চলের উত্তর সীমা, দক্ষিণের বদ্বীপ অঞ্চল ছিল দক্ষিণ বঙ্গ। পরবর্তীকালে কেশব সেন ও বিশ্বরূপ সেনের আমলেও বঙ্গের দুটি ভাগ পরিলক্ষিত হয়। তবে এবার নাম আলাদ- একটি ’বিক্রমপুর’ ও অপরটি “নাব্য’। প্রাচীন শিলালিপিতে “বিক্রমপুর’ ও “নাব্য’ নামে বঙ্গের দুটি অঞ্চলের নাম পাওয়া যায়। বর্তমান বিক্রমপুর পরগনা ও তার সাথে আধুনিক ইদিলপুর পরগনার কিয়দংশ নিয়ে ছিল বিক্রমপুর। নাব্য বলে বর্তমানে কোন জায়গার অস্তিত্ব নেই। ধারণা করা হয়, ফরিদপুর, বরিশাল, পটুয়াখালীর নিম্ন জলাভূমি এ নাব্য অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত ছিল। বৃহত্তর বগুড়া, পাবনা, ময়মনসিংহ জেলার পশ্চিমাঞ্চল, ঢাকা, ফরিদপুর, কুষ্টিয়া, বৃহত্তর কুমিল- ও নোয়াখালীর কিছু অংশ নিয়ে বঙ্গ গঠিত হয়েছিল। “বঙ্গ’ থেকে “বাঙালি’া জাতির উৎপত্তি ঘটেছিল।
পুন্ড্র:
প্রাচীন বাংলার জনপদগুলোর মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হলো পুন্ড্র। বলা হয় যে, “পুন্ড্র’ বলে এক জাতি এ জনপদ গড়ে তুলেছিল। বৈদিক সাহিত্য ও মহাভারতে এ জাতির উলে- আছে। পুন্ড্রদের রাজ্যের রাজধানীর নাম পুন্ড্রনগর।খ পরবর্তীকালে এর নাম হয় মহাস্থানগড়। সম্ভবত মৌর্য সম্রাট অশোকের রাজত্বকালে (খ্রিঃ পূ: ২৭৩-২৩২ অব্দ) প্রাচীন পুন্ড্র রাজ্য স্বাধীন সত্তা হারায়। সমৃদ্ধি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পঞ্চম-ষষ্ঠ শতকে তা পুন্ড্রবর্ধনে রূপান্তরিত হয়েছে। সে সময়কার পুন্ড্রবর্ধন অন্তত বগুড়া, দিনাজপুর ও রাজশাহী জেলা জুড়ে বিস-ৃত ছিল। রাজমহল- গঙ্গা-ভাগীরথী হতে আরম্ভ করে করতোয়া পর্যন্ত মোটামুটি সমস্ত উত্তর বঙ্গই বোধহয় সে সময় পুন্ড্রবর্ধনের অন্তর্ভুক্ত ছিল। সেন আমলে পুন্ড্রবর্ধনের দক্ষিণতম সীমা পদ্মা পেরিয়ে একেবারে খাড়ি বিষয় (বর্তমান চব্বিশ পরগনার খাড়ি পরগনা) ও ঢাকা- বরিশালের সমুদ্র তীর পর্যন্ত বিস-ৃত ছিল। বগুড়া হতে সাত মাইল দূরে মহাস্থানগড় প্রাচীন পুন্ড্রবর্ধন নগরীর ধ্বংসাবশেষ বলে পণ্ডিতেরা অনুমান করেন।
প্রাচীন সভ্যতার নির্দশনের দিক দিয়ে পুন্ড্রই ছিল প্রাচীন বাংলার সবচেয়ে সমৃদ্ধ জনপদ। বাংলাদেশে প্রাপ্ত পাথরের চাকতিতে খোদাই করা সম্ভবত প্রাচীনতম শিলালিপি এখানে পাওয়া গেছে।
হরিকেল :
সাত শতকের লেখকেরা হরিকেল নামে অপর এক জনপদের বর্ণনা করেছেন। চীনা ভ্রমণকারী ইৎসিং বলেছেন, হরিকেল ছিল পূর্ব ভারতের শেষ সীমায়। আবার কারো কারো লিপিতে হরিকেলের যে পরিচয় পাওয়া যায় তাতে বর্তমান চট্টগ্রামেরও অংশ খুঁজে পাওয়া যায়। সমস্ত তথ্য পর্যালোচনা করে ধরে নেওয়া যায় যে, পূর্বে শ্রীহট্ট (সিলেট) থেকে চট্টগ্রামের অংশ বিশেষ পর্যন্ত হরিকেল জনপদ বিস-ৃত ছিল। যদিও মধ্যখানে সমতট রাজ্যের অবসি'তি ছিল- যা কিছুটা বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে। আসলে তখন জনপদের কোথাও কোথাও বেশ শিথিল অবস্থা বিরাজ করছিল। তা ছাড়া বঙ্গ, সমতট ও হরিকেল- তিনটি পৃথক জনপদ হলেও এরা খুব নিকট প্রতিবেশি হওয়ায় কখনো কখনো কোনো কোনো এলাকায় অন্য জনপদের প্রভাব বিরাজ করত বলে ধারণা করা হয়। প্রকৃতপক্ষে, সপ্তম ও অষ্টম শতক হতে দশ ও এগারো শতক পর্যন্ত হরিকেল একটি স্বতন্ত্র রাজ্য ছিল। কিন্তু পূর্ব-বাংলার চন্দ্র রাজবংশের রাজা ত্রৈলোক্যচন্দ্রের চন্দ্রদ্বীপ অধিকারের পর হতে হরিকেলকে মোটামুটি বঙ্গের অংশ বলে ধরা হয়। অনেকে আবার শুধু সিলেটের সাথে হরিকেলকে অভিন্ন বলে মনে করেন।
সমতট :
পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব বাংলায় বঙ্গের প্রতিবেশী জনপদ হিসেবে ছিল সমতটের অবস্থান। এ অঞ্চলটি ছিল আর্দ্র নিম্নভূমি। কেহ কেহ মনে করেন সমতট বর্তমান কুমিল-র প্রাচীন নাম। আবার কেহ মনে করেন, কুমিল- ও নোয়াখালীাা অঞ্চল নিয়ে সমতট গঠিত হয়েছিল। সাত শতক থেকে বারো শতক পর্যন্ত বর্তমান ত্রিপুরা জেলা ছিল সমতটের অন্যতম অংশ। এক সময় এ জনপদের পশ্চিম সীমা চব্বিশ পরগনার খাড়ি পরগনা পর্যন্ত বিস-ৃত ছিল। গঙ্গা-ভাগীরথীর পূর্ব তীর থেকে শুরু করে মেঘনার মোহনা পর্যন্ত সমুদ্রকূলবর্তী অঞ্চলকেই সম্ভবত বলা হতো সমতট। কুমিল- শহরের ১২া মাইল পশ্চিমে বড় কামতা নামক স্থানটি সাত শতকে এর রাজধানী ছিল।
বরেন্দ্র :
বরেন্দ্রী, বরেন্দ্র বা বরেন্দ্র ভূমি নামে প্রাচীন বাংলায় অপর একটি জনপদের কথা জানা যায়। এটিও উত্তর বঙ্গের একটি জনপদ। বরেন্দ্র পুন্ড্রবর্ধন জনপদের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ছিল। জনপদের প্রধান শহর, মৌর্য ও গুপ্ত আমলে প্রাদেশিক শাসনকর্তার কেন্দ্র পুন্ড্রনগরের অবস্থানও ছিল এই বরেন্দ্র এলাকায়। তাই একে জনপদ বলা যায় না। কিন্তু এ নামে এক সময় সমগ্র এলাকা পরিচিত হতো। তাই প্রাচীন বাংলার ইতিহাসে একে জনপদের মর্যাদা দেওয়া হয়। একথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, গঙ্গা ও করতোয়া নদীর মধ্যবর্তী অঞ্চলে ছিল এ জনপদের অবস্থান। বগুড়া, দিনাজপুর ও রাজশাহী জেলার অনেকটা অঞ্চল এবং সম্ভবত পাবনা জেলা জুড়ে বরেন্দ্র অঞ্চল বিস-ৃত ছিল। তাম্রলিপ্ত : হরিকেলের উত্তরে অবসি'ত ছিল তাম্রলিপ্ত জনপদ। বর্তমান মেদিনীপুর জেলার তমলুকই ছিল তাম্রলিপ্তের প্রাণকেন্দ্র। সমুদ্র উপকূলবর্তী এ এলাকা ছিল খুব নিচু ও আর্দ্র। নৌ চলাচলের জন্য জায়গাটি ছিল খুব উত্তম। প্রাচীনকালে তাম্রলিপ্ত গুরুত্বপূর্ণ নৌ-বাণিজ্যের কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত ছিল। হুগলী ও রূপনারায়ণ নদের সঙ্গমস'ল হতে ১২ মাইল দূরে রূপনারায়ণের তীরে এ বন্দরটি অবসি'ত ছিল। সাত শতক হতে ইহা দণ্ডভুক্তি নামে পরিচিত হতে থাকে। আট শতকের পর হতেই তাম্রলিপ্ত বন্দরের সমৃদ্ধি নষ্ট হয়ে যায়।
চন্দ্রদ্বীপ :
উপরোক্ত জনপদগুলো ছাড়া আরও একটি ক্ষুদ্র জনপদের নাম প্রাচীন বাংলায় পাওয়া যায়। এটা হলো চন্দ্রদ্বীপ। বর্তমান বরিশাল জেলাই ছিল চন্দ্রদ্বীপের মূল ভূ-খণ্ড ও প্রাণকেন্দ্র। এ প্রাচীন জনপদটি বালেশ্বর ও মেঘনার মধ্যবর্তী স্থানে অবসি'ত ছিল।
এছাড়া বৃহত্তর প্রাচীন বাংলায় দণ্ডভুক্তি, উত্তর রাঢ় (বর্তমান মুর্শিদাবাদ জেলার পশ্চিমাংশ, সমগ্র বীরভূম জেলা এবং বর্ধমান জেলার কাটোয়া মহকুমা), দক্ষিণ রাঢ় (বতর্মান বর্ধমানের দক্ষিণাংশ, হুগলীর বহুলাংশ এবং হাওড়া জেলা), বাংলা বা বাঙলা (সাধারণত খুলনা, বরিশাল ও পটুয়াখালীর সুন্দর বনাঞ্চল) ইত্যাদি নামেও শক্তিশালী জনপদ ছিল। এভাবে অতি প্রাচীনকাল হতে ছয়-সাত শতক পর্যন্ত প্রাচীন বাংলার বিভিন্ন অংশ ভিন্ন ভিন্ন নামে পরিচিত ছিল। মূলত:, ইহা ছিল রাজনৈতিক ও ভৌগোলিক বিভাগ। সপ্তম শতকের গোড়ার দিকে শশাংক গৌড়ের রাজা হয়ে মুর্শিদাবাদ হতে উৎকল (উত্তর উড়িষ্যা) পর্যন্ত সমগ্র এলাকাকে সংঘবদ্ধ করেন। তারপর হতে বাংলা তিনটি জনপদ নামে পরিচিত হত। এগুলো হলো-পুন্ড্রবর্ধন, গৌড় ও বঙ্গ। বাকী অন্যান্য জনপদগুলো এ তিনটির মধ্যে বিলীন হয়ে যায়। বিভক্ত জনপদগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করার প্রচেষ্টা পাল ও সেন রাজাদের আমলেই অনেকটা পরিপূর্ণতা লাভ করে। শশাংশ এবং পাল রাজারা সমগ্র পশ্চিম বঙ্গের রাজা হয়েও “রাঢ়াধিপতি’ বা “গৌড়েশ্বর’ বলেই পরিচয় দিতেন। ফলে গৌড়’ নামটি পরিচিতি লাভ করে।
প্রাচীন বাংলার জনপদ হতে আমরা তখনকার বাংলার ভৌগোলিক অবয়ব, সীমারেখা, রাজনৈতিক বৈশিষ্ট্য ইত্যাদি সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা লাভ করতে পারি। প্রাচীন বাংলায় তখন কোনো রাজনৈতিক ঐক্য ছিল না। শক্তিশালী শাসকগণ তাঁদের আধিপত্য বিস্তারের মাধ্যমে একাধিক জনপদের শাসন ক্ষমতা লাভ করতেন। এভাবে জনপদগুলো প্রাচীন বাংলায় প্রথম ভূখণ্ডগত ইউনিট বা প্রশাসনিক ইউনিট হিসাবে ভূমিকা পালন করে পরবর্তীতে রাজনৈতিক ঐক্য গঠনে সহায়তা করেছিল।
এই ব্লগের লেখাসমূহ সরাসরি বোর্ড বই থেকে উদ্ধৃত এবং Creative Commons Attribution-NonCommercial-NoDerivatives 4.0 International License এর আওতায় প্রকাশিত।

No comments:

Post a Comment