উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় জাদুঘর বাংলাদেশের একমাত্র অ্যাকাডেমিক
জাদুঘর যা মূলত মানব ইতিহাস, শিল্প, এবং সংস্কৃতি বিষয়ে শিক্ষা ও গবেষণা
কার্যক্রমে শিক্ষার্থী ও গবেষকদের সহায়তা প্রদান, প্রত্নতত্ত্ব, ইতিহাস ও
প্রাচীন শিল্পকলার নিদর্শন সংগ্রহ, সংরক্ষণ, প্রদর্শন এবং এসব বিষয়ে মৌলিক
গবেষণার সুযোগ সৃষ্টির
লক্ষে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী উপজেলায় চট্টগ্রাম
বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনের প্রাকৃতিক এলাকায় অবস্থিত।
এটি চট্টগ্রামের একমাত্র শিল্প জাদুঘর এবং দেশের পাবলিক
বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের মধ্যেও একমাত্র জাদুঘর হিসেবে বিবেচিত।
জাদুঘরটির বর্তমান স্থায়ী সংগ্রহ সংখ্যা প্রায় শতাধিক, যেখানে
রয়েছে প্রাগৈতিহাসিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক ভাস্কর্য, লোকশিল্প, ইসলামিক এবং
সমসাময়িক শিল্পের বিভিন্ন সংগ্রহ এবং বাংলাদেশের আধুনিক শিল্পকলার
নিদর্শন। পাশাপাশি রয়েছে কাঠের
জীবাশ্ম; ময়নামতী, মহাস্থান ও পাহাড়পুর প্রত্নক্ষেত্র হতে উৎখননকৃত
বিভিন্ন শিল্পবস্ত্ত; প্রাচীন ও মধ্যযুগের মুদ্রা, শিলালিপি, পান্ডুলিপি,
ভাস্কর্য, টেরাকোটা, অস্ত্র ও আগ্নেয়াস্ত্র, পোষাক-পরিচ্ছদ, ধাতু
শিল্পকর্ম, চীনামাটির বাসন-কোসন এবং গাত্রালঙ্কারসহ অন্যান্য ক্ষুদ্র
লোকশিল্প। এছাড়াও চট্টগ্রাম মহানগরের নাসিরাবাদ পাহাড় হতে
প্রাপ্ত টার্সিয়ারি যুগের একটি মৎস-জীবাশ্ম এই সংগ্রহশালার সর্বপ্রাচীন
নিদর্শন হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের ঐতিহাসিক
দলিলপত্র; বাংলাদেশ সহ বিভিন্ন দেশ থেকে সংগৃহীত
উল্লেলখযোগ্য মুক্তিযুদ্ধের পোস্টার, প্যাম্পলেট, সংবাদপত্রের কর্তনী,
বিভিন্ন প্রকাশনা ও প্রশাসনিক দলিলপত্র রয়েছে এই জাদুঘরের সংরক্ষণাগারে।
একটি অ্যাকাডেমিক জাদুঘর হিসেবে গবেষণার উপকরণের সহজলভ্যতা ও সুযোগ সুবিধা
প্রদানের উদ্দেশ্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে ১৯৭৩
সালে জাদুঘরটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। পাশাপাশি জনস্বার্থ উদ্দীপিত করার
লক্ষ্যে এবং বাংলাদেশের ইতিহাস, প্রত্নতত্ত্ব ও শিল্প ঐতিহ্যের রসাস্বাদনে
উৎসাহিত করার লক্ষে জাদুঘরটি পরিচালিত হয়ে থাকে।
ইতিহাস
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় জাদুঘর প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া মূলত নভেম্বর ২৬,
১৯৬৬ সালে শুরু হয়, একই দিনে যাত্রা শুরু করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ কর্তৃক জাদুঘরটির আনুষ্ঠানিকভাবে
প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়েছিল জুন ১৪, ১৯৭৩ সালে।
জাদুঘর প্রতিষ্ঠার ধারণা প্রাপ্ত হয়েছিল মূলত একটি প্রদর্শনীর আয়োজনের
মধ্য দিয়ে, যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্বোধন উপলক্ষ্যে ২৪টি প্রাচীন বস্তু
প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়েছিল। মমতাজ হাসান, তৎকালীন পাকিস্তান জাদুঘর
অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তানের ব্যবস্থাপনা
পরিচালক, উক্ত প্রদর্শনকৃত বস্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে দান করেন।
প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ ও প্রত্নতাত্ত্বিক আজিজুর রহমান মল্লিক,
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য, এবং বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ ও
বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন অতিরিক্ত অধ্যাপক ও ইতিহাস বিভাগের প্রধান এবং
পরবর্তীকালীন উপাচার্য আবদুল করিম এই ধারণা থেকে সক্রিয়ভাবে উক্ত
প্রত্নতত্ব সংগ্রহের বিষয়ে প্রাথমিক উদ্যোগ গ্রহণ করেন। পরবর্তীকালীন
সময়ে আজিজুর রহমান মল্লিকের পৃষ্ঠপোষকতায় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস
বিভাগের অধ্যাপক আবদুল করিমের নেতৃত্বে একটি সমন্বিত জরিপ-কার্য পরিচালিত
হয় ১৯৬৭ সালের ৭, ১০ ও ১৪ মে। যেখানে ইতিহাস বিভাগের প্রথম ব্যাচের ছাত্র
শামসুল হোসাইন, মামুনুল বারী, আবদুল ওহাব, কামাল উদ-দীন সহ অন্যান্য
শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে প্রথম পর্যায়ে চট্টগ্রাম-ঢাকা ট্রাঙ্ক সড়কের
নিকটবর্তী চট্টগ্রাম থেকে ধুম পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকায় সমন্বিত প্রচেষ্টায়
পরিচালিত এই যৌথ জরিপের মাধ্যমে পুরাকীর্তি এবং অন্যান্য বস্তু সংগ্রহ করা
হয়। এই জরিপ থেকে প্রাপ্ত দুই খণ্ড শিলালিপি এবং মেহরাবের খিলান জাদৃঘরের
অন্যতম সংগ্রহ। এছাড়াও উক্ত জরিপ চলাকালে সময়ে ইতিহাস বিভাগের ছাত্র
মহীউদ্দীন হোসাইন চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলা থেকে সংগৃহীত গরুরবাহন
বিষ্ণুর একটি ভাস্কর্য জাদুঘর সংগ্রহশালায় দান করেন। এই জরিপ কার্যক্রম
শেষে সংগৃহীত প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শনসমূহ ইতিহাস বিভাগের একটি কক্ষে
প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়, যেখানে তিরিশটি পুরাকীর্তির এ সংগ্রহে মধ্যে
ছিল নয়টি বস্ত্রসম্ভার, চৌদ্দটি যুদ্ধাস্ত্র, দু’খণ্ড শিলালিপি, দুইটি
ভাস্কর্য, এক খণ্ড স্থাপত্যাংশ এবং দুইটি পিতলের থালা।
বর্তমানে এই জাদুঘর পরিচালনায় যুক্ত রয়েছেন- একজন পরিচালক, একজন
প্রদর্শনী কর্মকর্তা, একজন সিনিয়র ক্যাটালগার, একজন গ্রন্থাগার সহকারী,
দুইজন গ্যালারি তত্ত্বাবধায়ক এবং একজন জ্যেষ্ঠ অনুসন্ধান সহকারীসহ মোট
সাতজন কর্মকর্তা।
স্থান পরিবর্তন
প্রাথমিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ও মানববিদ্যা অনুষদ ভবনের দ্বিতীয়
তলায় একটি কক্ষে ক্ষুদ্র পরিসরে জাদুঘরের যাত্রা শুরু হয়। পরবর্তীকালে
কিছুদিন উক্ত ভবনের নিচতলার দুইটি কক্ষে পূর্বের চেয়ে বাড়তি পরিসরে কিছু
সময় জাদুঘরের কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছিল। এরপর চট্টগ্রাম শহরেরমৌলানা
মোহাম্মদ আলী সড়কে অবস্থিত চট্টগ্রাম কলাভবনে (বর্তমানে জেলা শিল্পকলা
একাডেমি স্বল্প পরিসরে এই জাদুঘর পরিচালিত হয় এবং এরপর পূনরায়
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের চতৃর্থ তলায় জাদুঞরটি স্থানান্তরিত হয়।
সর্বমোট পাঁচবার স্থান পরিবর্তন করার পর, আগস্ট ১০, ১৯৯২ সালে স্থায়ী
প্রদর্শনীর জন্য বর্তমান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগার ভবনের পশ্চিম
পার্শ্বে একটি দ্বিতল ভবনে আনুষ্ঠানিকভাবে পুনরায় জাদুঘরের কার্যক্রম
চালু হয়। বিভিন্ন অস্থায়ী অবস্থানের পর ১৯৯২ সালে, চট্টগ্রাম
বিশ্ববিদ্যালয় জাদুঘরটি বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনে, একটি দ্বিতল
ভবনে স্থায়ীভাবে স্থানান্তর করা হয়।
সংগ্রহসমূহ
গ্যালারি | সংগ্রহ সংখ্যা |
---|---|
প্রাগৈতিহাসিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক গ্যালারি | |
ভাস্কর্য গ্যালারি | ৭৭ |
ইসলামিক শিল্পকলা গ্যালারি | |
লোকশিল্প গ্যালারি | |
সমকালীন চিত্রকলা গ্যালারি |
জাদুঘর ভবনের দ্বিতীয় তলায় প্রদর্শনীর জন্য পাঁচটি গ্যালারি রয়েছে:
জাদুঘর ভবনের প্রথম তলায় অর্ন্তভুক্ত রয়েছে:
- আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ কোষ গ্রন্থাগার
- প্রত্নতত্ত্ব সংরক্ষণ গবেষণাগার
- চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় জাদুঘর সংরক্ষণাগার
- নথি ও গবেষণা সম্পদ কেন্দ্র
- প্রদর্শনী ও কর্মশালার জন্য নির্দিষ্ট স্থান
- চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় জাদুঘর কার্যালয়
জাদুঘর ভবনের দ্বিতীয় তলায় চারটি গ্যালারিতে রয়েছে বাছাইকৃত সংগ্রহের শ্রেণিবিন্যস্ত প্রদর্শনী।
প্রাগৈতিহাসিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক গ্যালারি
এছাড়া রয়েছে বাঙলার প্রাগৈতাহাসিক কালের জীবনযাত্রার ছবিসহ কিছু দুর্লভ নিদর্শন। গ্যালারির কোনার দিকে আদিম জীবনের একটি ডিত্তরম প্রদর্শনীর ব্যবস্থা রয়েছে, যেখানে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড পাহাড় এলাকার আদীম পরিবারের দৈনন্দিন চিত্র ফুটে উঠেছে। সংগ্রহশালার বৃহত অংশে রয়েছে ময়নামতি,
চট্টগ্রাম বিভাগের প্রধান প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, থেকে প্রাপ্ত
ভাষ্কর্য, যা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত।
অন্যদিকে ময়নামতীর পুরাকীর্তির ৫১টি প্রত্নতত্ত্ব বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের পরিচালকের নিকট থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় জাদুঘর কর্তৃক ঋণকৃত হয়েছে। বর্তমানে এছাড়াও মহাস্থানগড় এবং পাহাড়পুর প্রত্নতাত্ত্বিক
স্থান থেকে প্রাপ্ত বস্তু জাদুঘরের সংগ্রহের অন্তর্গত। বাংলাদেশের বিভিন্ন
স্থান থেকে পাওয়া ছাপাঙ্কিত মুদ্রা, পাহাড়পুর থেকে প্রাপ্ত পোড়ামাটির
ফলক, এবং বগুড়া জেলার প্রাচীনতম বস্তু রয়েছে। পাশাপাশি মহাস্থানগড় থেকে
পাওয়া কিচু অষ্ট-খাদ ব্রেসলেট সংরক্ষিত এখানে রয়েছে। উপমহাদেশের
এই অঞ্চলের প্রাগৈতিহাসিক উপাদানের প্রমাণ আবিষ্কারের ঘটনা দূর্লভ হলেও
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় জাদুঘর শুরুর দিক থেকেই প্রাগৈতিহাসিক
প্রত্নতত্ত্ব সংগ্রহের বিষেয়ে সচেতন ভূমিকা রাখে এবং 'প্রাগৈতিহাসিক ও
প্রত্নতাত্ত্বিক গ্যালারি' সংগ্রহ শুরু করে। এই গ্যালারি সংগ্রহশালায়
একাধিক পোড়ামাটির ফলক, ধাতুচিত্র, অলংকৃত ইট, কাদামাটির মূর্তি, প্রাচীন
মুদ্রা, জপমালা এবং মৃতশিল্প প্রদর্শনের ব্যবস্থা রয়েছে। চট্টগ্রাম
মহানগরের নাসিরাবাদ পাহাড় হতে প্রাপ্ত টার্সিয়ারি যুগের
একটি মৎস-জীবাশ্ম উপহার হিসেবে এই সংগ্রহশালার সর্বপ্রাচীন নিদর্শন হিসেবে
বিবেচিত। এই প্রচীন জীবাশ্ম যা এই অঞ্চলের প্রাকৃতিক ইতিহাস অধ্যয়ন এবং
গবেষণায় সহায়ক হিসেবে পরিগনিত। এছাড়াও রয়েছে অসামান্য কাঠের জীবাশ্ম।
এই সংগ্রহশালায় রয়েছে বাঙলার প্রাচীন স্থানসমূহের কিছু সংখক মূর্তি, যার
বেশিরভাগ কাদামাটি দিয়ে তৈরি। মূর্তিগুলো সাধারণত পশু এবং মানুষের গঠন
প্রকাশ করে থাকে। এছাড়াও পোড়ামাটি দিয়ে সজ্জিত মন্দিরের অভ্যন্তর ও
বাহিরের ভাস্কর্যের বিভিন্ন নমুনা পাওয়া যায় এই সংগ্রহশালায়।
ভাস্কর্য গ্যালারি
ভাস্কর্য গ্যালারিতে সংরক্ষিত বিভিন্ন ভাস্কর্যসর্মহ, গৌরবময় অতীতের
চাক্ষুষ উপস্থাপনা হিসাবে এই সংগ্রহশালার সবচেয়ে মূল্যবান বস্তু হিসেবে
বিবেচিত, যার মাধ্যমে আদীম সামাজিক-সাংস্কৃতিক অবস্থার দৃষ্টান্ত চাক্ষুষ
উপলব্ধি সম্ভব। এই সংগ্রহশালায় ৫২টি পাথর এবং ২৫টি ব্রোঞ্জ ভাস্কর্য
রয়েছে। এই সংগ্রহের একটা বড় অংশ বাংলাদেশের শুল্ক ও পুলিশ কর্তৃপক্ষ
কর্তৃক বাজেয়াপ্তকৃত হবার পর পুরাকীর্তি হিসেবে এখানে সংরক্ষণ করা হয়েছে।
এখানে রয়েছে কষ্ঠিপাথরের প্রায় ৩০টি মূর্তি এবং ধাতু নির্মিত ভাস্কর্য
যেখানে বিভিন্ন ধর্মীয় বিশ্বাস চিত্রিত হয়েছে, যার অধিকাংশই পাল
সাম্রাজ্য (৮০০ - ১২০০ খ্রিস্টাব্দ) সময়ের হিন্দু রীতির অন্তর্গত।
সংগ্রহে গুপ্ত সাম্রাজ্যের (৩২০ - ৫৫০ খ্রিস্টাব্দ) একটি সূর্য মূর্তি
রয়েছে। এই ব্রাহ্মণ্য এবং বৌদ্ধ প্রতিকৃতি থেকে তৎকালীন সময়ের বিশ্বাস,
আচার-আচরণ, রীতিনীতি, বাস্তবায়ন, পোষাক শৈলী, গাত্রালঙ্কার,
কেশবিন্যাস-প্রণালী এবং প্রাচীনত্ব থেকে অন্যান্য প্রচীন ধারনা পাওয়া
যায়। পাথরের ভাস্কর্যের মধ্যে কালানুক্রমিকভাবে যথাক্রমে
রয়েছে বৈষ্ণব, শিব, সুরিয়া, শাক্ত, এবং গাণপত্য পৌরাণিক চরিত্রসমূহের
মূর্তি এবং ভাষ্কর্য। যার মাধ্যমে উল্লেখযোগ্যভাবে ভাস্কর্যের দক্ষতা,
পৃষ্ঠপোষকদের আবেগ এবং ভক্তি চিত্র ফুটে উঠে। এথানে রয়েছে
চট্টগ্রামের মিরসরাইথেকে প্রাপ্ত ৯ম শতকের সেন্ড পাথরের ভাস্কর্যের গরুড়
রাধা বিষ্ণুর একটি প্রাচীনতম নিদর্শন। অন্যদিকে রয়েছে, কাঠ এবং ধাতু
নির্মিত ভাস্কর্য।
২০১১ সালে, শামসুল হোসেন, জাদুঘরের সাবেক ডেপুটি কিউরেটর কর্তৃক
প্রস্তুতকৃত পাথরের ভাস্কর্য উপর একটি বর্ণনামূলক পঞ্জি প্রকাশিত হয়, যা
বাঙলার ভাস্কর্য এবং মূর্তিতত্ত্ব বিষয়ে বিদ্যমান গবেষণার কাজে অন্যতম
ভূমিকা রাখে।
আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ কোষ গ্রন্থাগার
এই কোষ গ্রন্থাগারে
"চট্টগ্রাম কোণ" নামে একটি স্বতন্ত্র স্থান, বিশেষ করে চট্টগ্রাম অঞ্চল
সম্পর্কিত বইয়ের সংগ্রহের জন্য শ্রেণীবদ্ধ রয়েছে। ক্যাপটেন পোগসনের চট্টগ্রাম ভ্রমণকালীন আখ্যান, ফারসি ভাষায় মৌলভী হামিদ-আল্লাহ খান রচিত প্রথম স্থানীয় ইতিহাস হাদীস আল-খোয়ানিন বা তারিখ-ই-চ্যাথাম, তরকচন্দ্র দাস গুপ্ত রচিত প্রথম বাংলা স্থানীয় ইতিহাস চট্টগ্রামের ইতিবৃত্ত, ডক্টর সুনীতি ভূষণ কানুনগো রচিত চট্রগ্রামের একটি ইতিহাস, মিজবাউদ্দিন খান রচিত চট্টগ্রাম বন্দরের ইতিহাস, পার্বত্য চট্টগ্রাম, রাজমালা (১৪৩১), আলাওল রচিত কাব্য পদ্মাবতী (১৬৪৮) প্রভৃতি এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য। জাদুঘরে, প্রখ্যাত বাঙালি সাহিত্যিক এবং মধ্যযূগীয় পুঁথি সংগ্রাহক আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদের সম্মানে
'আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ কোষ গ্রন্থাগার' নামে একটি গ্রন্থাগার রয়েছে।
যেখানে রয়েছে তালপাতা এবং তুলট কাগজে লেখা দূর্লভ পুঁতিসমগ্র। এই গ্রন্থাগারে মূর্তিতত্ত্ব, লেখতত্ত্ব,মুদ্রাতত্ত্ব, স্থাপত্য, ক্ষুদ্র ও লোকশিল্প এবং অন্যান্য সাংস্কৃতিক সম্পদ সম্পর্কে গবেষণায় সহায়তার জন্য সংশ্লিষ্ট পুস্তক ও সাময়িকীর দূর্লভ সংগ্রহ রয়েছে। এটি
মূলত অধ্যয়ন এবং শিল্পকর্ম ও প্রত্ননিদর্শন চিহ্নিতকরণের জন্য একটি
কার্যকর কোষ গ্রন্থাগার হিসেবে পরিচিত। গ্রন্থাগারটি প্রায় ৪,০০০ প্রাচীন
বই এবং ২,০০০ মূল্যবান নথিপত্রে সমৃদ্ধ। এছাড়াও এই কোষ গ্রন্থাগার
সংগ্রহশালায় রয়েছে ধর্ম ও দর্শন, মুদ্রাতত্ত্ব, লিপিতত্ত্ব, লোকশিল্প এবংকারুশিল্প, নৃবিজ্ঞান, জাতিতত্ত্ব, প্রাচীন লিপি-বিজ্ঞান, ভূগোল ও ভূতত্ত্ব, ইতিহাস, প্রত্নতত্ত্ব, ললিতকলা, স্থাপত্য, প্রদর্শনশালাসংক্রান্ত বিদ্যা, মূর্তিতত্ত্ব,ক্ষুদ্র কলা, সঙ্গীততত্ত্ব ও নৃত্য, সমাজবিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক ইতিহাস প্রভৃতি
নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর বই। উল্লেখিত বিষয়ের বইসমূহ সতন্ত্রভাবে শ্রেণীকরণ
করা হয়েছে যেখানে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনার একটি নিজস্ব তাক
রয়েছে।
এছাড়াও ভারতের প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ বৃহৎ খণ্ড, এপিগ্রাফিয়া ইন্ডিকা,
ভারতীয় লিপিতত্ত্বের বার্ষিক প্রতিবেদন, ভারতীয় ঐতিহাসিক বিষয়ে
ত্রৈমাসিক, বাংলাদেশে দূর্লভ শিল্প সংগ্রহ প্রভৃতি অর্ন্তভূক্ত রয়েছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় জাদুঘর সংরক্ষণাগার
গবেষকদের ব্যবহারের জন্য প্রাচীন ও দুর্লভ আরবি, ফার্সি, সংস্কৃত, পালি ও
বাংলা পান্ডুলিপি; দুষ্প্রাপ্য ছাপানো বই, পুস্তিকা, প্রচারপত্র, পোস্টার,
প্রকাশনা, সাময়িকী, পত্রিকা, সংবাদপত্রের কর্তনী, আরবি ও ফারসি নথি, এবং
অন্যান্য সংরক্ষণ উপকরণে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় জাদুঘর সংরক্ষণাগার
সমৃদ্ধ। এছাড়াও গবেষকদের ব্যবহারের সুবিধার জন্য এ সমস্ত পান্ডুলিপির
বর্ণনামূলক পঞ্জি রয়েছে। সংরক্ষণাগারে আরো রয়েছে
বাংলাদেশের হবিগঞ্জের একটি বেসরকারি জাদুঘর থেকে সংগৃহীত আহোরণী নামে
একটি প্রাচীন মুদ্রিত বই। বইটি ১৯৭৫ সালে সংগ্রহ করা হয়েছির। মরিচ পাতায়
এবং পুরোনো কাগজে লিখিত প্রাচীন পালি ও সংস্কৃত পান্ডুলিপির ৯৮টি টুকরা,
যা এখনো উক্ত বিষয়ে দক্ষতার অভাবে অনূদিত হয় নি। সংরক্ষণাগারে দুর্লভ বই,
পত্রিকা এবং দুষ্প্রাপ্য মানচিত্রাবলীর সংগ্রহ রয়েছে; যার মধ্যে জেমস
রেনেলের "হিন্দুস্থান বা মুঘল সাম্রাজ্য এবং তার বেঙ্গল মানচিত্র"
(ইংরেজি: Memoir of a map of Hindustan or the Mughal empire and his Bengal atlas) উল্লেখযোগ্য।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় জাদুঘরের অন্যান্য সংগ্রহের সঙ্গে এই সকল নথির
বিভিন্ন প্রদর্শনীর আয়োজন পণ্ডিত, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, এবং সাধারণ
দর্শকদের মনোযোগ আকর্ষণ করার বিষয়। এছাড়াও ১৯৯৬ সালে, বাংলাদেশের
স্বাধীনতার রজতজয়ন্তী উদযাপন অনুষ্ঠানে "মুক্তি যুদ্ধের দলিল পত্রের বিশেষ
প্রদর্শনী" শিরোনামে এক বিশেষ প্রদর্শনীতে উক্ত নথি তালিকা ধারণকারী একটি
ছোট পুস্তিকা প্রকাশ করা হয়।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় জাদুঘর সংরক্ষণাগার কয়েকটি ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে, যার মধ্যে অন্যতম:
- মুক্তিযুদ্ধ কর্নার
- চট্টগ্রাম কর্নার
- চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্নার
- চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় জাদুঘর প্রকাশনা
- চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনা
মুক্তিযুদ্ধ কর্নার
এই সংরক্ষণাগার বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিপুল নথির মূল্যবান সংগ্রহ
রয়েছে, যা দেশ-বিদেশ এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বদের নিকট থেকে সংগৃহীত হয়েছে,
যেখানে রয়েছে আলোকচিত্র, চিঠি, প্রকাশনা ও পোস্টার। এই সংগ্রহে যুদ্ধ
চলাকালীন সময়ের টাইম, নিউজউইক, দ্য ইকনমিস্ট এবং বিশ্বের অন্যান্য
নেতৃস্থানীয় প্রত্রিকার এবং প্রকাশনা সংগ্রহ উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও রয়েছে
মুক্তযুদ্ধের দূর্লভ দলিলপত্র, স্মারক গ্রন্থ এবং মুক্তিযুদ্ধে নিহত হওয়া
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে বের হওয়া বিভিন্ন
প্রকাশনা।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় জাদুঘর প্রকাশনা
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় জাদুঘর প্রকাশনার বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত বিষয়ের
মধ্যে অর্ন্তভূক্ত রয়েছে মুদ্রা পঞ্জি ও প্রদর্শনীর সুবিন্যস্ত তালিকা
এবং একাধিক বক্তৃতা বিবরণী। এছাড়াও এখান থেকে প্রকাশিত হয়েছে জাদুঘরে
সংগৃহীত বিভিন্ন পাথরের ভাস্কর্যের বিবরণমূলক পঞ্জি।
No comments:
Post a Comment