জাদুঘর বা সংগ্রহালয় বলতে বোঝায় এমন একটি ভবন বা প্রতিষ্ঠান যেখানে পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শনসমূহের সংগ্রহ সংরক্ষিত থাকে। জাদুঘরে
বৈজ্ঞানিক, শৈল্পিক ও ঐতিহাসিক গুরুত্বসম্পন্ন বস্তুসমূহ সংগ্রহ করে
সংরক্ষিত করা হয় এবং সেগুলি প্রদর্শ আধার বা ডিসপ্লে কেসের মধ্যে রেখে
স্থায়ী অথবা অস্থায়ীভাবে জনসাধারণের সমক্ষে প্রদর্শিত করা হয়। বিশ্বের
অধিকাংশ বড়ো জাদুঘরই প্রধান প্রধান শহরগুলিতে অবস্থিত। অবশ্য ছোটো শহর,
মফস্বল ও গ্রামাঞ্চলেও স্থানীয় জাদুঘর গড়ে উঠতে দেখা যায়।
অতীতকালে জাদুঘরগুলি গড়ে উঠত ধনী ব্যক্তিদের ব্যক্তিগত বা পারিবারিক
উদ্যোগে অথবা কোনো প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগে। এই সব জাদুঘরে সংরক্ষিত থাকত
শিল্পকর্ম, দুষ্প্রাপ্য ও আশ্চর্যজনক প্রাকৃতিক বস্তু বা পুরাবস্তু। সারা বিশ্বেই জাদুঘর দেখা যায়। প্রাচীনকালে গড়ে ওঠা আলেকজান্দ্রিয়ার জাদুঘর ছিল আধুনিককালের স্নাতক প্রতিষ্ঠানগুলির সমরূপ।
বিশিষ্ট অভিধানকার জ্ঞানেন্দ্রমোহন দাশের মতে, বাংলায় "জাদুঘর" কথাটি আরবি আজায়ব্ ঘর বা আজায়ব্ খানা শব্দটির
সঙ্গে তুলনীয়। বাংলায় "জাদুঘর" কথাটির অর্থ হল, "যে গৃহে অদ্ভুত অদ্ভুত
পদার্থসমূহের সংগ্রহ আছে এবং যা দেখিয়া মন্ত্রমুগ্ধবৎ হ’তে হয়।"আকাদেমি বিদ্যার্থী বাংলা অভিধান মতে, "জাদুঘর" শব্দের অর্থ, "যে-ঘরে নানা অত্যাশ্চর্য জিনিস বা প্রাচীন জিনিস সংরক্ষিত থাকে।"
ইংরেজি "museum" ("মিউজিয়াম") শব্দটি এসেছে লাতিন শব্দ থেকে। ইংরেজি
বহুবচনে এই শব্দের রূপটি হল "museums" (বা অপ্রচলিত শব্দ, "musea")।
শব্দটির মূল উৎস গ্রিক শব্দ Μουσεῖον (Mouseion); যার
অর্থ গ্রিক পুরাণের শিল্পকলার পৃষ্ঠপোষক মিউজদের মন্দির। প্রাচীন গ্রিসে এই
জাতীয় মন্দিরগুলিকে কেন্দ্র করে পাঠাগার ও শিল্প পুরাকীর্তির সংগ্রহশালাও
গড়ে উঠতে দেখা যেত। ২৮০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দেআলেকজান্দ্রিয়ায় টলেমি প্রথম
সোটার প্রতিষ্ঠিত দর্শন মিউজিয়াম (প্রতিষ্ঠান) ছিল এই জাতীয় একটি
জাদুঘর। অ্যাথেন্সে প্লেটো প্রথম একটি মিউজিয়াম গ্রন্থাগার গড়ে
তুলেছিলেন। যদিও পসেনিয়াসের রচনায় অন্য একটি স্থানকে "মিউজিয়াম" বলে
অভিহিত করা হয়েছে। এটি হল ধ্রুপদি অ্যাথেন্সে অ্যাক্রোপোলিশের বিপরীত দিকে
অবস্থিত একটি ছোটো পাহাড়। কথিত আছে, মউসিয়াস নামে এক ব্যক্তি এই পাহাড়ে
বসে গান গাইতেন। বৃদ্ধ বয়সে তিনি সেখানেই মারা যান এবং সেই পাহাড়েই
তাঁকে সমাধিস্থ করা হয়। তাঁর নামানুসারে পাহাড়টির নামকরণ হয়েছিল
"মউসিয়ন" ("Mouseion")।
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
No comments:
Post a Comment