উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
পুঠিয়া রাজবাড়ী বা পাঁচআনি জমিদারবাড়ী হচ্ছে মহারানী হেমন্তকুমারী দেবীর বাসভবন। বাংলার প্রত্নতাত্ত্বিক ঐতিহ্যের মধ্যে রাজশাহীর পুঠিয়া রাজবাড়ী অন্যতম। ১৮৯৫ সালে মহারানী হেমন্তকুমারী দেবী আকর্ষনীয় ইন্দো ইউরোপীয় স্থাপত্যরীতিতে আয়তাকার দ্বিতল বর্তমান রাজবাড়ীটি নির্মাণ করেন।
অবস্থান
রাজশাহী জেলা সদর হতে ৩২ কিঃমিঃ উত্তর- পূর্বে নাটোর মহাসড়ক
অভিমুখে পুঠিয়া অবস্থিত। বাসে করে দেশের যে কোন স্থান হতে পুঠিয়া আসা
যায় এবং ট্রেনে করে নাটোর অথবা রাজশাহী নেমেও সড়কপথে সহজে আসা যায়।
ইতিহাস
সপ্তদশ শতকে মোগল আমলে তৎকালীন বাংলার বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যে পুঠিয়া
জমিদারি ছিল প্রাচীনতম। কথিত যে জনৈক নীলাম্বর মোগল সম্রাট
জাহাঙ্গীরের (১৬০৫—২৭ খ্রি.) কাছ থেকে ‘রাজা’ উপাধি লাভ করার পর সেটি
পুঠিয়া রাজবাড়ীরূপে পরিচিতি লাভ করে। ১৭৪৪ সালে জমিদারি ভাগ হয়। সেই
ভাগাভাগিতে জমিদারের বড় ছেলে পান সম্পত্তির সাড়ে পাঁচ আনা এবং অন্য তিন
ছেলে পান সাড়ে তিন আনা। ১৯৫০ সাল পর্যন্ত জমিদারি প্রথা ছিল। প্রথা
বিলুপ্ত হলে পুঠিয়া রাজবাড়ীর জমিদারিও বিলুপ্ত হয়। কিন্তু জমিদারি
বিলুপ্ত হলেও সে আমলে নির্মিত তাঁদের প্রাসাদ, মন্দির ও অন্যান্য স্থাপনা
ঠিকই এখনো টিকে রয়েছে। অপরূপ এ প্রাসাদটি ১৮৯৫ সালে মহারানী হেমন্ত কুমারী
দেবী তাঁর শাশুড়ি মহারানী শরৎ সুন্দরী দেবীর সম্মানে নির্মাণ করান।
অবকাঠামো
ভবনের সম্মুখ ভাগের স্তম্ভ, অলংকরন, কাঠের কাজ, কক্ষের দেয়ালে ও দরজার উপর
ফুল ও লতাপাতার চিত্রকর্ম চমৎকার নির্মাণ শৈলীর পরিচয় বহন করে। রাজবাড়ীর
ছাদ সমতল, ছাদে লোহার বীম, কাঠের বর্গা এবং টালি ব্যবহৃত হয়েছে।
নিরাপত্তার জন্য রাজবাড়ির চারপাশে পরিখা খনন করা হয়েছিল।
পুঠিয়া রাজবাড়ীর আশে পাশে ছয়টি রাজদিঘি আছে। প্রত্যেকটা দিঘীর আয়তন ছয়
একর করে। মন্দিরও আছে ছয়টি। সবচেয়ে বড় শিব মন্দির। এ ছাড়া আছে
রাধাগোবিন্দ মন্দির, গোপাল মন্দির, গোবিন্দ মন্দির, দোলমঞ্চ ইত্যাদি।
প্রতিটি মন্দিরের দেয়ালেই অপূর্ব সব পোড়ামাটির ফলকের কারুকাজ। জোড়বাংলা
মন্দির, বাংলো মন্দির, পঞ্চরত্ন অর্থাৎ চূড়াবিশিষ্ট মন্দির অর্থাৎ বাংলার
বিভিন্ন গড়নরীতির মন্দিরগুলোর প্রতিটিই আকর্ষণীয়। এ ছাড়া রানির স্নানের
ঘাট, অন্দর মহল মিলিয়ে বিশাল রাজবাড়ী প্রাঙ্গণ।
No comments:
Post a Comment