Saturday 30 September 2017

সীতারকোর্ট বদ্ধবিহার (নবাবগঞ্জ, দিনাজপুর)

সীতারকোর্ট বদ্ধবিহার
নবাবগন্জ উপজেলা প্রোপার থেকে মাত্র দুই কিমি দুরে বাংলাদেশের প্রথম অতিপ্রচীন বুদ্ধবিহার যাহা স্থানীয় ভাবে সীতার কোট নামে পরিচিত।কথিত আছে বা সেইখানের হিন্দু সম্প্রদায়গন এবং এলাকা বয়স্ক লোকেরা বিশ্বাস করে , রাজা যশরথের জৈষ্টপুত্র শ্রীরামের  পত্নী সীতাকে বনবাসে পাঠিয়েছিলেন এই পঞ্চবট্টি  বনে বনবাসের পরে সীতা আশ্রয় পেয়েছিলেন বাল্মিকি মনির কাছে আর বাল্কি মনি যেখানে তপস্যা করতেন তার নাম মনির থান নামে পরিচিত  স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়গন বিশ্বাস করেন এই বনেই রামের স্ত্রী সীতার বনবাস হয়েছিলো। এই লোকো কথা যদি সত্য হয় তাহলে হিন্দুদের জন্য বা শরনার্থীদের  কাছে বিশ্বের একটি চমকপ্রদ স্থান হবে

আয়তন বর্ণনা : এই স্থাপত্যটি পরিকল্পনায় প্রায় বর্গাকৃতির (পূর্ব-পশ্চিমে ৬৫.২৩ মি এবং উত্তর-দক্ষিণে ৬৪.১১ মি) বিহারটির উত্তর এবং দক্ষিণ বাহুদ্বয় বহির্দিকে প্রক্ষিপ্ত ছিল। প্রশস্ত মুখপাত(frontage) বিশিষ্ট তোরণ কমপ্লেক্সটি উত্তর বাহুর মধ্যাংশে অবস্থিত

তোরণ অংশে ছিল ছুটি প্রহরীকক্ষ। বিহারের প্রবেশ পথটি ছিল উন্মুক্ত জায়গা দিয়ে একটি প্রবেশ কক্ষের দিকে। প্রবেশ কক্ষটি ছিল বিহার কক্ষের সারিতে একই রেখায়। পূর্ব বাহুর উত্তরাংশে পেছনের দেওয়াল ভেদ করে একটি সম্পূরক প্রবেশপথ ছিল। দক্ষিণ বাহুর বহির্মূখী অভিক্ষেপটি ছিল একটি হল ঘরের মতো এবং সেই হল ঘরে ঢুকতে হতো ভেতর দিক দিয়ে। বিহারটিতে ৪১টি কক্ষ ছিল, উত্তর বাহুতে ৮টি এবং অন্য তিন বাহুতে ১১ টি করে। কক্ষগুলি ছিল প্রায় সমআয়তনের (.৬৬মি×.৩৫ মি) কক্ষগুলির পেছনের দেওয়ালে কুলুঙ্গি ছিল এবং কক্ষগুলি দেওয়াল দ্বারা বিভক্ত ছিল। 

বিভাজক দেওয়ালের পুরুত্ব ছিল .৯১ মিঃ থেকে .২২ মি এবং পেছনের দেওয়ালের পুরুত্ব গিল .৫৯ মি, কিন্তু সম্মুখের দেওয়ালের পুরুত্ব ছিল .০৭ মি। বিহারের ভেতরের দিকে .৫৯ মি প্রশস্ত একটি অভ্যন্তরীণ টানা বারান্দা ছিল। .৬৮ মি লম্বা এবং .০৭ মি প্রশস্ত দরজার মাধ্যমে বিহারের কক্ষগুলি অভ্যন্তরীণ টানা বারান্দার সঙ্গে সংযুক্ত ছিল। একটি .২২ মি পুরু এবং .৭৬ মি উচ্চতা বিশিষ্ট দেয়াল সমগ্র বারান্দাকে অঙ্গিনা থেকে আড়াল করে রাখত। বিহারের পূর্ব, পশ্চিম এবং দক্ষিণ বাহুর কেন্দ্রীয় কক্ষত্রয় অন্যান্য সাধারণ কক্ষের তুলনায় আয়তেনে বড় ছিল। প্রতিটি কেন্দ্রীয় কক্ষের একটি করে ইটের বেদি ছিল। সেখানে পূজার মূর্তি রাখা হতো খুব সম্ভবত দক্ষিণ দিকে কেন্দ্রীয় কক্ষটি ছিল প্রধান মন্দির। প্রধান মন্দিরটির সম্মুখে স্তম্ভ শোভিত প্যাভিলিয়নটি মন্ডপ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকবে। 

বিহার ভবনের দক্ষিণ দিকে একটু দূরে কিন্তু মূল ভবনের সঙ্গে আবৃত পথ দ্বারা সংযুক্ত সম্মুখভাগে বারান্দাসহ পাঁচটি কক্ষ পাওয়া যায়। পন্ডিতদের অভিমত এগুলি শৌচাগার হিসেবে নির্মিত হয়েছিল। ছাদ ঢালাইয়ের জন্য চুন, সুরকি এবং ভার বহনের জন্য কড়িকাঠের ব্যবহার দেখা যায়। সীতাকোট বিহার আঙ্গিনার মধ্যবর্তী স্থানে প্রধান মন্দির ছিল না। এখানে পাহাড়পুর, শালবন বিহার এবং আনন্দ বিহারের মতো ঐতিহ্যবাহী পোড়ামাটির ফলক অনুপস্থিত। তবে আকার আয়তনের দিক দিয়ে সীতাকোট বিহারের সঙ্গে বগুড়ায় অবস্থিত ভাসু বিহারের অনেক মিল রয়েছে


ব্রোঞ্জনির্মিত একটি বোধিসত্ত্ব পদ্মাপাণি এবং বোধিসত্ত্ব মঞ্জুশ্রী মূর্তি সীতাকোট বিহার থেকে প্রাপ্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রত্ননিদর্শন। মূর্তি দুটির গঠনশৈলী থেকে অনুমান করা যায়, এগুলি ৭ম-৮ম শতাব্দীতে তৈরী। বিহার নির্মাণ সম্পর্কে দুটি নির্মাণকালের কথা বলা হলেও স্তরবিন্যাস পদ্ধতিতে বিহারের কাল নির্ধারণ করা হয় নি

No comments:

Post a Comment